উইন্ডোজ পিসির গতি বৃদ্ধি করার উপায়

নতুন অবস্থায় একটা Celeron প্রসেসরের 4GB র‌্যাম ওয়ালা কম্পিউটারও ফাস্ট মনে হয়। কিন্তু ২-৩ বছর ব্যবহারের পর একটা Core-i7 প্রসেসরের 16GB র‌্যাম ওয়ালা কম্পিউটারকেও স্লো মনে হয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়মিত ব্যবহারের ফলে পারফরম্যান্স ড্রপ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নতুন কেনা পিসি যদি ২-৩ বছর ব্যবহারের পরেই অনেক স্লো হয়ে যায় তবে সেটাকে অস্বাভাবিকই বলতে হবে। একটি পিসির স্পিড তার কনফিগারেশনের উপর যতটুকু নির্ভর করে, ঠিক ততটুকুই নির্ভর করে তার ব্যবহারকারীর উপর। ব্যবহারকারী যদি তার পিসি নিয়মিত কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরিচালনা করে, তাহলে ৪-৫ বছর পরও ভালো স্পিড পাবে। আর যদি নিজের ইচ্ছামতো পরিচালনা করে তাহলে ৪-৫ মাস পরেই পিসি স্লো মনে হবে। এখন, এই নির্দিষ্ট নিয়মগুলো বিভিন্ন এক্সপার্টদের মতে বিভিন্ন রকম। তাছাড়া পিসির হার্ডওয়্যারগুলোকে কতটা যত্ন করা হচ্ছে তার উপরেও পিসির স্পিড নির্ভর করে। সেসব নিয়ে লিখতে গেলে একটা ছোটখাট বই-ই লেখা হয়ে যাবে। তাই শুধুমাত্র সফটওয়্যারের দিকটা মেইনটেইন করে কীভাবে উইন্ডোজ পিসির গতি বৃদ্ধি করা যায় তা সম্পর্কেই লিখেছি এই পোস্টে।

১। উইন্ডোজ আপডেট করা

যখন প্রথম কোনো উইন্ডোজ ভার্সন (যেমন: Windows XP, 7, 8, 10, 11) রিলিজ করা হয় তখন সেই ভার্সন তার আগের ভার্সনের চেয়ে কিছুটা স্লো কাজ করে, কথায় কথায় হ্যাং, ল্যাগ কিংবা ক্র্যাশ করে। একাধিক আপডেটের মাধ্যমে মাইক্রোসফট এই ইস্যুগুলিকে সমাধান করে। তাই সবসময় উইন্ডোজ আপডেট রাখলে পারফরম্যান্স ভালো পাওয়া যায়।

তবে সব আপডেটে যে পারফরম্যান্স ভালো পাওয়া যাবে এমন নয়। অনেক সময় দেখা যায় আপডেট দেয়ার পর পারফরম্যান্স আরো খারাপ হয়ে যায়। তাই আপডেট দেয়ার আগে আপডেটের ভার্সনটি গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে হবে যে সেই ভার্সনে আপডেট করা ঠিক হবে কিনা।

উইন্ডোজ আপডেট করার জন্য প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Windows Update. তারপর আপডেট মেনু আসলে সেখান থেকে Check for updates বাটনে ক্লিক করে আপডেট থাকলে ইন্সটল করতে হবে।

২। অপ্রাসঙ্গিক স্টার্টআপ অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করা

আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, আপনার পিসি নতুন অবস্থায় কতো ফাস্ট ছিল আর এখন কতো স্লো হয়ে গেছে। এর কারণ নতুন অবস্থায় পিসিতে কম অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা ছিল। আর এখন অনেক অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা এবং এইসব অ্যাপ্লিকেশনের অধিকাংশই অপ্রয়োজনে কম্পিউটার চালু হওয়ার সাথে সাথেই ওপেন হয়, ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে থাকে এবং অনেক বড় অ্যামাউন্টের স্টোরেজ স্পেস দখল করে।

স্টার্টআপ অ্যাপ্লিকেশনগুলোর লিস্ট পেতে প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Startup Apps. তারপর সেই লিস্ট থেকে অপ্রাসঙ্গিক স্টার্টআপ অ্যাপ্লিকেশনগুলো Off করে দিতে হবে।

৩। অপ্রাসঙ্গিক ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করা

ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে পারে এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর লিস্ট পেতে প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Background apps. তারপর সেই লিস্ট থেকে অপ্রাসঙ্গিক ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশনগুলো Off করে দিতে হবে।

৪। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো আনইন্সটল করা

উইন্ডোজ সিস্টেমে ইন্সটল থাকা সকল অ্যাপ্লিকেশনের লিস্ট পেতে প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Add or remove programs. তারপর সেই লিস্ট থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো Uninstall করে দিতে হবে।

উইন্ডোজে কীভাবে কোনো অ্যাপ্লিকেশন পুরোপুরি আনইন্সটল করতে হয় তা সম্পর্কে আমি আগের পোস্টে লিখেছি। লিংকটিতে ক্লিক করে পড়ে ফেলুন।

৫। স্টোরেজের স্পেস খালি করা

পিসিতে স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে এসএসডি ব্যবহার করা হাই পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হার্ডডিস্কের তুলনায় এসএসডির দাম অনেক বেশি হওয়ায় অনেকে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে, যা অনেক খারাপ পারফরম্যান্স দেয়। বাজেট কম হলে একটা ২৫৬জিবির এসএসডি নিয়ে সেটা সি-ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করলে এবং আরেকটা ৫১২জিবির হার্ডডিস্ক নিয়ে সেটা অন্যান্য ডেটা রাখার ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করলে অনেক ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে।

এছাড়া নিয়মিত Disk Cleanup ব্যবহার করে জাঙ্ক ফাইল ডিলিট করা এবং Disk Defragmenter ব্যবহার করে ড্রাইভ ডিফ্র্যাগমেন্ট করলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে।

৬। হাই পারফরম্যান্স পাওয়ার প্ল্যান চালু করা

সার্চ মেনুতে Choose or customize a power plan লিখে পাওয়ার প্ল্যান মেনুতে গেলে দেখা যাবে সেখানে বেশ কয়েকটি মোড আছে। অনেকেই আছে যারা সবসময় Balanced কিংবা Best power efficiency মোডে পিসি চালায়, এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হলেও কিছু কিছু অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সময় পিসি খুব স্লো কাজ করে। তাই যখন পিসিতে ভারী কাজ করা হবে (যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন করা, ৩ডি রেন্ডারিং করা, ডেভেলপমেন্ট করা, গেম খেলা) তখন ভালো পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য High performance মোডে পিসি চালাতে হবে।

৭। উইন্ডোজের ভিজুয়াল ইফেক্ট কাস্টমাইজ করা

উইন্ডোজে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করার সময়, মিনিমাইজ বা ম্যাক্সিমাইজ করার সময়, মেনুতে স্ক্রল করার সময়, বাটনে ক্লিক করার সময় বিভিন্ন রকম অ্যানিমেশন হয়। উইন্ডোজ এই অ্যানিমেশনগুলো করতে গিয়ে পিসির পারফরম্যান্স খারাপ করে ফেলে। তাই এই অ্যানিমেশন বা ভিজুয়াল ইফেক্টগুলো কাস্টমাইজ করার মাধ্যমে পিসির পারফরম্যান্স বাড়ানো যায়।

ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট কাস্টমাইজ করার জন্য প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Adjust the appearance and performance of Windows. এরপর পাওয়ার অপশনস মেনু আসবে। সেখানকার Visual Effects ট্যাবে চারটি অপশন পাওয়া যাবে। Adjust for best appearance অপশনটি সিলেক্ট করলে উইন্ডোজের অ্যাপিয়ারেন্স সুন্দর লাগবে, কিন্তু পারফরম্যান্স একটু খারাপ দিবে। Adjust for best performance অপশনটি সিলেক্ট করলে উইন্ডোজ ভালো পারফরম্যান্স দিবে, কিন্তু দেখতে ভালো লাগবে না। Let Windows choose what’s best for my computer অপশনটি সিলেক্ট করলে পিসির হার্ডওয়্যারের উপর ভিত্তি করে অ্যাপিয়ারেন্স সিলেক্ট হবে। তখন দেখতেও ভালো লাগবে, আবার পারফরম্যান্সও ভালো থাকবে।

৮। হার্ডওয়্যার অ্যাকসিলারেটেড জিপিইউ শিডিউলিং চালু করা

কম্পিউটারের গ্রাফিক্স কার্ড নামক হার্ডওয়্যারটি তার কাজকর্ম করার সময় পুরো সুবিধা করতে পারে না। উইন্ডোজ তার কাজে হস্তক্ষেপ করে। ফলে ল্যাটেন্সি এবং পারফরম্যান্স ইস্যু দেখা যায়। উইন্ডোজকে হস্তক্ষেপ করতে না দিলেই গ্রাফিক্স কার্ড তার পূর্ণাঙ্গ সামর্থ কাজে লাগিে ল্যাটেন্সি কমাতে পারে এবং ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে। এজন্য প্রথমে সার্চ মেনুতে লিখতে হবে Graphics settings. তারপর উইন্ডোজের গ্রাফিক্স সেটিংস এসে গেলে সেখান থেকে Hardware-accelerated GPU scheduling ফিচারটিকে On করে দিতে হবে।

এই আটটি ধাপ সম্পন্ন করার পরও যদি আপনার পিসি স্লো কাজ করে তবে ফ্যাক্টরি-রিসেট দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফ্যাক্টরি-রিসেট দিলে পিসি নতুন অবস্থায় যেরকম ফাস্ট ছিল সেরকম হয়ে যাবে। ফ্যাক্টরি-রিসেট কিভাবে দিতে হয় সেটা মনে হয় আর বলার দরকার নেই। ইন্টারনেটে প্রচুর টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে এ নিয়ে। তবে ফ্যাক্টরি-রিসেট দেয়ার আগে পিসির ফাইলগুলোর ব্যাকআপ নিয়ে রাখবেন অথবা পার্সোনাল ফাইল ঠিক রেখে রিসেট দেয়ার অপশনটি সিলেক্ট করবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উইন্ডোজ পিসি থেকে কোনো সফটওয়্যার পুরোপুরি আনইন্সটল করার নিয়ম

কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ের দুনিয়ায় প্রবেশের গল্প